জীবনে তো কত রকমের গাড়িতেই উঠলাম, কই, রত্নার গাড়ির মতো এত ‘মানবিক বোধসম্পন্ন’ গাড়ি তো একটাও দেখলাম না। গাড়ি সাধারণত চলে চালকের ইচ্ছায়। রত্নার গাড়িও চালকের ইচ্ছায় নড়েচড়ে, তবে কিছু সিদ্ধান্ত সে নিজে নিজে নেয়। কবিগুরু বেঁচে থাকলে লিখতেন, ‘তোমার যেখানে যাবার সাধ চলে যাও, আমি রত্নার গাড়িতেই রয়ে যাব’। আজ কবিগুরু নেই, কিন্তু আমি আছি। কাজেই রত্নার গাড়ি নিয়ে দু-চারটি ভালো কথা লিখব বলে কলম তুলে নিতে হলো।
রত্না যখন তার সদ্য কেনা গাড়িতে চড়ার আমন্ত্রণ জানাল, তখন আমি মনে মনে বেশ পুলকিতই হয়েছিলাম। সেই পুলক শিহরণে রূপান্তরিত হলো, যখন রত্না বলল, ‘ওঠো তোমার নিযেরতো কোনদিন গাড়ি কেনার ক্ষমতা হবেনা ।’ আমি ওঠার জন্য গাড়ির দরজার হাতল ধরে টান মারলাম। দরজা খুলল না, তবে হাতলখানা খুলে আমার হাতে চলে এল। তাৎ ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রত্না বাণী ঝাড়ল, বিদেশি গাড়ি তো, একটু সফিসটিকেটেড। গাইয়ার মতো এত জোরে টান মারলেন কেন?এক বুক লজ্জা নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। সেই লজ্জা আতঙ্কে রূপান্তরিত হলো যখন দেখলাম, ড্রাইভারের সিটে রত্না নিজেই বসল। গত সপ্তাহে রত্না ড্রাইভিং কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। অর্ধেক টাকা দিয়ে দুটো থিওরি ক্লাস করার পর পুরো কোর্স ফি না দিয়েই সে পালিয়েছে ( জন্মের কুঞ্জুস )। একজন অকালে ঝরে পড়া ফেরারি শিক্ষানবিশ ড্রাইভারের পাশে বসে আমি কুল কুল করে ঘামতে লাগলাম এবং ঘামতে ঘামতে দেখলাম ও স্টার্ট দেয়ার জন্য চাবি ঘোরাল। গাড়ি স্টার্ট নিল না, তবে ঘু উ উ উ ঘু শব্দ হতে লাগল। আমি শুধালাম, এটা এফএম রেডিও নাকি? কোন স্টেশন?
‘প্যাঁচাল পেড়োনাতো। গাড়ি রোদের মধ্যে ছিল তো, এ জন্য ইঞ্জিন গরম হয়ে গেছে। স্টার্ট নিচ্ছে না।’দুই-একবার চেষ্টা করার পর হঠাৎ রত্না আবিষ্কার করল, যে চাবি দিয়ে সে স্টার্ট নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেটি আদৌ গাড়ির চাবি না, বাসার স্টিল আলমারির চাবি। সঠিক চাবি দিয়ে রত্না আবার ট্রাই করল। এবার গাড়ি ঝাঁকি মেরে স্টার্ট নিয়ে ধীর গতিতে পেছনের দিকে যেতে থাকল। রত্না সর্বশক্তি দিয়ে ব্রেক চেপে ধরল।
কাহিনির এ পর্যায়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসায় জানালার গ্লাস নামানোর জন্য হাত বাড়াতেই রত্না বলল, ‘গ্লাস নামাবে না। এসি দিচ্ছি।’ সে এসির বাটনে চাপ দিল। কী আশ্চর্য, এবার সত্যি সত্যি এফএম রেডিও বাজতে শুরু করল। রত্না বেজায় গম্ভীর হয়ে পুনর্বার এসির বাটনে চাপ দিল। এবার কোলকাতা আকাশবানীর পরিষ্কার শব্দ শোনা গেল।
আমি ক্ষীণ কণ্ঠে বললাম, এফএম রেডিও ছাড়ো তো, দেখো তো কী অবস্থা হয়। গরিবের কথা বাসি হলেও ফলে। এখানে টাটকাই ফলল। রেডিও ছাড়া মাত্রই এসি চালু হলো। তবে বাতাসটা বেজায় গরম।
এ সময় কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ ছাড়াই গাড়ির গতি হঠাৎ বেড়ে গেল। আমরা মুহূর্তের মধ্যে বিধান সরণির মোড়ে চলে এলাম। সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। রত্না কষে ব্রেক ধরে আছে, আমি প্লেনের কো-পাইলটের মতো গিয়ারের ডান্ডা ধরে বসে আছি। পাসের পার্ক থেকে এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া উড়ে এল। সে হাওয়ায় গাড়ির সব কটা গ্লাস আপনা-আপনি সড় সড় করে নেমে এল। শেষ বিকেলের সেই মনোরম বাতাসে গাড়ির ভেতরটা একেবারেই জুড়িয়ে গেল। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। সাধে কি বলে, মানবিক বোধসম্পন্ন গাড়ি। রত্নার দিকে তখন তাকানো যাচ্ছে না।
সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ায় রত্না গাড়ি স্টার্ট দিল। ঘটনার পুনরাবৃত্তি। গাড়ি একটু পেছনে গিয়ে আবার সামনে চলতে শুরু করল। এ সময় আমার একটা প্রাচীন প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেল। তীর নাকি সামনে ছুটে চলার আগে একটু পিছিয়ে আসে।
বিধানসভা ভবনের পার্ক আমাদের গন্তব্য। পার্ক ছাড়িয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছে, তবু গাড়ি থামছে না। এ সময় রত্নাকে ভীষণ অস্থির দেখাচ্ছিল। একটু পরে রত্না অত্যন্ত করুণ এবং বিনীত গলায় বলল, রানিং গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামতে পারবে? দেখো তো কোথাও থান ইট পাওয়া যায় কি না, চাক্কার সামনে দিতে হবে, গাড়ির ব্রেক ধরছে না…’আমি কোন রকমে লাফদিয়ে নামলাম হাতপার ছাল বাকল শেষ -----তারপরথেকে রত্নাকে দেলেই আমার পূরান ব্যাথাগুলো চাগিয়ে ওঠে ।।
রত্না যখন তার সদ্য কেনা গাড়িতে চড়ার আমন্ত্রণ জানাল, তখন আমি মনে মনে বেশ পুলকিতই হয়েছিলাম। সেই পুলক শিহরণে রূপান্তরিত হলো, যখন রত্না বলল, ‘ওঠো তোমার নিযেরতো কোনদিন গাড়ি কেনার ক্ষমতা হবেনা ।’ আমি ওঠার জন্য গাড়ির দরজার হাতল ধরে টান মারলাম। দরজা খুলল না, তবে হাতলখানা খুলে আমার হাতে চলে এল। তাৎ ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রত্না বাণী ঝাড়ল, বিদেশি গাড়ি তো, একটু সফিসটিকেটেড। গাইয়ার মতো এত জোরে টান মারলেন কেন?এক বুক লজ্জা নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। সেই লজ্জা আতঙ্কে রূপান্তরিত হলো যখন দেখলাম, ড্রাইভারের সিটে রত্না নিজেই বসল। গত সপ্তাহে রত্না ড্রাইভিং কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। অর্ধেক টাকা দিয়ে দুটো থিওরি ক্লাস করার পর পুরো কোর্স ফি না দিয়েই সে পালিয়েছে ( জন্মের কুঞ্জুস )। একজন অকালে ঝরে পড়া ফেরারি শিক্ষানবিশ ড্রাইভারের পাশে বসে আমি কুল কুল করে ঘামতে লাগলাম এবং ঘামতে ঘামতে দেখলাম ও স্টার্ট দেয়ার জন্য চাবি ঘোরাল। গাড়ি স্টার্ট নিল না, তবে ঘু উ উ উ ঘু শব্দ হতে লাগল। আমি শুধালাম, এটা এফএম রেডিও নাকি? কোন স্টেশন?
‘প্যাঁচাল পেড়োনাতো। গাড়ি রোদের মধ্যে ছিল তো, এ জন্য ইঞ্জিন গরম হয়ে গেছে। স্টার্ট নিচ্ছে না।’দুই-একবার চেষ্টা করার পর হঠাৎ রত্না আবিষ্কার করল, যে চাবি দিয়ে সে স্টার্ট নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেটি আদৌ গাড়ির চাবি না, বাসার স্টিল আলমারির চাবি। সঠিক চাবি দিয়ে রত্না আবার ট্রাই করল। এবার গাড়ি ঝাঁকি মেরে স্টার্ট নিয়ে ধীর গতিতে পেছনের দিকে যেতে থাকল। রত্না সর্বশক্তি দিয়ে ব্রেক চেপে ধরল।
কাহিনির এ পর্যায়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসায় জানালার গ্লাস নামানোর জন্য হাত বাড়াতেই রত্না বলল, ‘গ্লাস নামাবে না। এসি দিচ্ছি।’ সে এসির বাটনে চাপ দিল। কী আশ্চর্য, এবার সত্যি সত্যি এফএম রেডিও বাজতে শুরু করল। রত্না বেজায় গম্ভীর হয়ে পুনর্বার এসির বাটনে চাপ দিল। এবার কোলকাতা আকাশবানীর পরিষ্কার শব্দ শোনা গেল।
আমি ক্ষীণ কণ্ঠে বললাম, এফএম রেডিও ছাড়ো তো, দেখো তো কী অবস্থা হয়। গরিবের কথা বাসি হলেও ফলে। এখানে টাটকাই ফলল। রেডিও ছাড়া মাত্রই এসি চালু হলো। তবে বাতাসটা বেজায় গরম।
এ সময় কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ ছাড়াই গাড়ির গতি হঠাৎ বেড়ে গেল। আমরা মুহূর্তের মধ্যে বিধান সরণির মোড়ে চলে এলাম। সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। রত্না কষে ব্রেক ধরে আছে, আমি প্লেনের কো-পাইলটের মতো গিয়ারের ডান্ডা ধরে বসে আছি। পাসের পার্ক থেকে এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া উড়ে এল। সে হাওয়ায় গাড়ির সব কটা গ্লাস আপনা-আপনি সড় সড় করে নেমে এল। শেষ বিকেলের সেই মনোরম বাতাসে গাড়ির ভেতরটা একেবারেই জুড়িয়ে গেল। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। সাধে কি বলে, মানবিক বোধসম্পন্ন গাড়ি। রত্নার দিকে তখন তাকানো যাচ্ছে না।
সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ায় রত্না গাড়ি স্টার্ট দিল। ঘটনার পুনরাবৃত্তি। গাড়ি একটু পেছনে গিয়ে আবার সামনে চলতে শুরু করল। এ সময় আমার একটা প্রাচীন প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেল। তীর নাকি সামনে ছুটে চলার আগে একটু পিছিয়ে আসে।
বিধানসভা ভবনের পার্ক আমাদের গন্তব্য। পার্ক ছাড়িয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছে, তবু গাড়ি থামছে না। এ সময় রত্নাকে ভীষণ অস্থির দেখাচ্ছিল। একটু পরে রত্না অত্যন্ত করুণ এবং বিনীত গলায় বলল, রানিং গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামতে পারবে? দেখো তো কোথাও থান ইট পাওয়া যায় কি না, চাক্কার সামনে দিতে হবে, গাড়ির ব্রেক ধরছে না…’আমি কোন রকমে লাফদিয়ে নামলাম হাতপার ছাল বাকল শেষ -----তারপরথেকে রত্নাকে দেলেই আমার পূরান ব্যাথাগুলো চাগিয়ে ওঠে ।।
No comments:
Post a Comment