Monday 14 May 2012

“গল্পটা তোর জন্য…”

সেদিন তোর সাথে নিয়ে কথা হচ্ছিল। তুই তোর বন্ধুদের সাথে মিশছিস, এটা শুনলে আমার ঈর্ষা হয় ওদেরকে। তবে কি এর মানে তোর প্রতি আমার অবিশ্বাস? নাহ! আমার মতে, ঈর্ষা আসলে ভালবাসারই উল্টো পিঠ। এই ঈর্ষার জন্ম ভালবাসা থেকেই। ভালবাসা না থাকলে এই ঈর্ষাবোধটা আসত না। আমাদের সম্পর্ক যখন শুধুই বন্ধুত্বের ছিল, তখনও তো তোকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু তখন তো এই ঈর্ষাবোধ, তিল পরিমাণ ছিল না। তুই তোর বন্ধুদের কথা বলতি, তাদের সাথে মিশতি। আসলে কি জানিস, বন্ধুত্বের ভালবাসা আর আমাদের এখনকার ভালবাসায় যোজন-যোজন ব্যবধান। একটাতে ঈর্ষাবোধ থাকে, অন্যটাতে থাকে না। আর তুই যদি মনে করিস এই ঈর্ষাবোধ থাকাতে আমাদের এখনকার ভালবাসা হীন হয়ে গেছে তাহলে বিরাট ভুল করবি। দুধরণের সম্পর্কই মহান, বিশাল পবিত্র। তোকে একটা উদাহরণ দেই। একজন মায়ের যদি একাধিক সন্তান থাকে তখন দেখা যায় প্রতিটি সন্তান একে অপরকে হিংসা করছে। ভাবছে, মা বোধ হয় আমাকে একটু কম ভালবাসেন। অথচ মায়ের ভালবাসাটা একেবারেই সরল, সহজ। সে কখনও কোনও সন্তানের প্রতি বৈষম্য দেখাতে পারে না। তার ভালবাসা সবার জন্যই সমান। কিন্তু তারপরও মায়ের প্রতি ভালবাসায় সন্তানদের মধ্যে ঈর্ষাবোধ থেকে যায়। এই ঈর্ষাবোধ কখনই অন্যকোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত না। আমার মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন এই বোধটার উপস্থিতিতে আমি কিন্তু গর্বিত। এর দ্বারা আমি বুঝে নেই আমি তোকে কতটা ভালবাসি। যেদিন তুই আমার মধ্যে এই বোধটার অনুপস্থিতি পাবি, সেদিন বুঝে নিস তোকে আর আমি ভালবাসিনা। তবে তুই শতভাগ নিশ্চিত থাক, এই ব্যাপারটা কখনো ঘটবে না। তুই পছন্দ করিস আর না করিস। আমার এই ঈর্ষাবোধ বাড়তে থাকবে, বাড়তেই থাকবে।
আমি এখন অনেকটা পাল্টে গেছি। আমার এই বর্তমান রূপ দেখে আমি বিস্মিত। আমি সত্যিই কখনো নিজেকে অতোটা পজেসিভ ভাবিনি। সেদিন তোর কাছে করা ফোনটা যখন তোর কোন এক ছেলেবন্ধু রিসিভ করল, আমার এতো কষ্ট হল! সত্যি, এতোটা কষ্টবোধ আমার কোনদিন হয়নি, কোনদিনও না। আমার মনে হচ্ছিল তুই শুধু আমার। শুধু আমার সাথে কথা বলবি তুই, আর কারো সাথে না। তোর উপর অধিকার শুধু আমার (আমার উপর যেমনটা তোর), আর কারো নয়। এখানে কিন্তু অবিশ্বাসের ব্যাপারটা (যা ভেবে তুই কষ্ট পেয়েছিস) আসতেই পারে না। আমি কখনো তোকে অবিশ্বাস করিনি, করবোও না। প্রচন্ড ঈর্ষাবোধ অধিকারবোধ থেকে এই কষ্টটার জন্ম। সেদিন যখন তুই বললি, তোর কালেকশনের সব চিঠিগুলো (তোকে লিখা) তুই সযত্নে সাজিয়ে রাখছিস, তখন আমার প্রথমে খুব ভাল লাগল। কিন্তু যখন বললি, ওই কালেকশনে আমার লিখা চিঠিগুলো ছাড়া আরো কয়েকজনের চিঠিও আছে, তখন কি আমার একটু হলেও খারাপ লাগছিল না? না, বললে মিথ্যে বলা হবে। আর আমরা চাই আমাদের মধ্যে কোন মিথ্যা থাকবেনা, লুকোচুরি থাকবে না। আসলে মিথ্যে, লুকোচুরি না থাকলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। যাই হোক, এই যে আমার এই খারাপ লাগাগুলো, আমি জানি তুই পছন্দ করিস না। কিন্তু তারপরও বলব তোকে নিয়ে আমার এই বোধগুলো কখনো হারাতে পারবনা। তোর জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি। তুই আমাকে যেমনটা হতে বলবি ঠিক তেমনটাই হতে পারব। তুই আমাকে তোর ইচ্ছে মতো গড়ে নিতে পারিস। কিন্তু আমার অনুভূতিগুলো পাল্টাতে পারবিনা কোনদিন। তোকে যে আমি বড্ড ভালবাসি।
একটা স্বপ্নের কথা বলি। সেদিন দেখলাম, আমি তোকে লেখা একটা কবিতা শুনাতে চাচ্ছি। তুই তখন কাকে জানি চিঠি লিখছিলি। বললি, একটু দাঁড়া, চিঠিটা শেষ করে নেই। চিঠিটা শেষ হতে না হতেই কে জানি ফোন করল তোকে। তুই তাকে এভয়েড করতে পারলি না। আড্ডা জুড়িয়ে দিলি। , ১০, ১৫মিনিট আমি অপো করলাম তোমার আড্ডা শেষ হবার জন্য। একসময় শেষ হলো তা। কিন্তু পরণেই কল বেলের শব্দ আরও কেউ আসল তোর সাথে দেখা করার জন্য। আমি যে কী কষ্ট পাচ্ছিলাম তখন একা একা বসে বসে! ঘুম ভেঙে গেল সাথে সাথে। দেখি, চোখের কোণায় জল। দেখ, দৃশ্যটা কল্পনা করতেই চোখ থেকে একফোঁটা জল জড়িয়ে পৃষ্ঠায় পড়ে গেল! কথা দে, তুই আমাকে এমন কষ্ট কখনো দিবি না? আমি কিন্তু বলছিনা তোর বন্ধুদের তুই ছেড়ে দিবি। অবশ্যই এটা বলছিনা। ব্যাপারটা হচ্ছে ইমপটের্ন্সের। এই ইমপর্টেন্সটা আবার জোর করে আনতে হয়না। এটা ভেতর ভেতর থেকে আপনাআপনি আসে। ভালবাসা জোর জবরদস্তি করে হয়না। যেখানে যুক্তি আছে, সেখানে ভালবাসা নেই। যেখানে ভালবাসা আছে, সেখানে যুক্তি নেই

পরিশিষ্ট: ভাল থাকিস তুই। হয়তো আমি ভাল থাকবো না। তুই কষ্ট পাস না তাতে। ভেবে নিস, কেউ কেউ জন্মগ্রহণ করে ভাল না থাকার জন্য। কারো কারো জন্মই হয় অপেক্ষায় থাকার জন্য।


No comments:

Post a Comment